মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬

আর জন্মের দুষ্টু লোক - সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

- সবার আগে আপনার যেটা দরকার মেজর মিত্র, সেটা হলো রেস্ট, কেননা আপনার এই হ্যালুসিনেশন বলুন, স্বপ্ন বলুন এগুলো যদি বাড়তে থাকে তাহলে ইট উইল আ্যাফেক্ট ইয়োর...
- হার্ট। জানি ডক্টর। কিন্তু এই মুহুর্তে আমাকে হার্ট স্পেশালিস্টের চেয়ে অনেক বেশী সাহায্য করতে পারেন একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট, তাই আপনার কাছে...
- দেখুন মেজর, এই যে ছবিতে এই জায়গাটা দেখছেন, এটাকে বলে হিপ্পোক্যাম্পালজাইরাস, এটা আমাদের মেমরি সেন্টর..
- ডক্টর, প্লিজ। এগুলো টেকনিকাল কথা। আমার... আমার ভাল লাগছেনা.. আপনি জানেন না কি চলছে আমার ভেতরে... আমি কি সেরে উঠবো ডক্টর....?
- দেখুন....মেজর.... রিকনসিলিয়েশন একটা উপায় হতে পারে... আগের জন্মের যে জায়গা গুলোর স্মৃতি ফিরে আসছে, সে জায়গা গুলো ভিজিট করলে হয়ত....
- উফফ ডক্টর...  ডক্টর.... ওখান থেকেই..... সেই থেকেই শুরু...
- কোথায়?
- আখনৌর। জম্মুর কাছে। এই বছর খানেক আগে। আমার পোস্টিং হলো ওখানে
- তার পর? তার আগে আগের জন্মের স্মৃতি কি....?
- না না। তার আগে কিচ্ছু ছিলো না.... জানেন.... কিন্তু প্রথম বার বর্ডার পেট্রোলে গিয়েই...
- আপনি জলটা খান মেজর....
- মনে হলো খুব চেনা জায়গা জানেন। আমার পেট্রোলে যাবার কথা নয়। আমার র‍্যাঙ্কের অফিসারেরা যায়না। কিন্তু আমায় কেমন নেশায় পেয়ে বসল ডক্টর...
- তার পর?
- তার পর থেকেই পর্দার মত স্মৃতির লেয়ার গুলো খুলে যেতে লাগল। স্পষ্ট হতে লাগল...
- দেখুন মেজর, ইট ক্যান বি এ কেস অফ দ্বৈত সত্তা। তবে আস্তে আস্তে কোনো একটা সত্ত্বা আর মেমরি ডমিন্যান্ট হয়ে যেতে থাকে
- সেটাই তো ভয় ডক্টর
- কিন্তু আপনি তো বলছেন আগের জন্মের স্মৃতিতেও আপনি সৈনিক
- হ্যাঁ ডক্টর। সৈনিক। ওই পরিবেশ, উর্দী, কম্যান্ড, ডিসিপ্লিন... মনে হতো আমার বহু কালের চেনা...
- কিছু ঘটনা মনে পড়ছে?
- পড়ছে। সেই আখনৌর সেক্টরেই। সেটা ছিল সেপ্টেম্বর। যুদ্ধ শুরু হলো...
- সেপ্টেম্বর? তার মানে সিক্সটি ফাইভ.... 
- আর সেখানেই ট্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে আমার ইউনিট নিয়ে দিনভোর লড়ে গেলাম। ট্যাঙ্ক আটকে রাখলাম... হুকুম ছিল যেন দুষমনের ট্যাঙ্ক এক পা ও না এগোয়
- তার পর?
- ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দুষমন ভারী আর্টিলারি ফায়ার শুরু করল... উফফফফ
- আর ইউ ওকে মেজর??
- ওহ ইয়েস ডক্টর। আমার পা দুটো উড়ে গিয়েছিল। তখনো জ্ঞান ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে সব ঝাপসা। ওখানেই আমি...
- মারা যান। বুঝেছি মেজর। দেশরক্ষার জন্য প্রান দেওয়া। বড় গৌরবের। আপনার কি সেই মৃত্যুভয় ফিরে আসছে?
- আপনি বুঝতে পারছেন না ডক্টর। একটু আগে বললেন না, দ্বৈত সত্ত্বা, যে কোনো একটা ডমিন্যান্ট হয়ে যায় আস্তে আস্তে...
- হ্যাঁ, কিন্তু আপনি তো আগের জন্মেও আর্মিতেই ছিলেন। অসুবিধে কোথায়?

- আর্মিতেই ছিলাম ডক্টর। মেজর সওকত ওসমান। পাকিস্তান আর্মি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন